ওরা যাকে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে: আহত রোহিঙ্গা
মিয়ানমারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সেনা-পুলিশের চলমান অভিযানে ‘নির্বিচারে হত্যা’ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোক্তার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাখাইনের মংডুর মেদি এলাকায় নিজের বাড়ি সামনে তাকে গুলি করা হয়।
এরপর পালিয়ে ঘন জঙ্গলে ঢুকে রাতভর হেঁটে শুক্রবার গভীর রাতে টেকনাফের উনছি প্রাং এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে গুলিবিদ্ধ আরও দুজন ছিলেন।
তিনজনকেই প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের মেডিসিন স্যঁ ফ্রঁতিয়ে (এমএসএফ) হাসপাতলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সেখান থেকে শনিবার সকালে মোক্তারের সঙ্গে মুছা নামে আরেকজনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে আনা হয়। এর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যে মুছার মৃত্যু হয়।
দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের পঞ্চম তলায় কথা হয় মোক্তারের সঙ্গে।
তিনি রোহিঙ্গা ভাষায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক রাত গভীর জঙ্গলে হেঁটেছি। শুক্রবার রাতেই আমরা তিনজন হেঁটে চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে চলে আসি বাংলাদেশে।
“মংডুর রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে পুলিশ ও সেনাবহিনী যাকে পারছে তাকেই গুলি করছে। বাড়ির সামনেই আমার বাম কাঁধের উপরের অংশে গুলি লাগে। পুলিশ ও মগরাই (রাখাইন বৌদ্ধ) গুলি করেছে।”
ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় মোক্তার বলেন, গুলি খেয়েই জঙ্গলে পালিয়ে যান তিনি। তার বাবা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্য সদস্যদের ভাগ্যে কী হয়েছে তা জানেন না তিনি।
স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান কোথায় কেমন আছে সে বিষয়েও তার কোনো ধারণা নেই।
তিনি বলেন, “ওখানে থাকার কোনো অবস্থা নেই। যাকে পারছে তাকেই মারছে।”
গত বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এক রাতে ৩০টি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায় ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা’। ওই হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১২ সদস্যসহ অন্তত ৭১ জন নিহত হয় বলে মিয়ানমার সরকারের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।
ওই হামলার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের দমন অভিযানের মধ্যে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার বাংলাদেশে প্রবেশের পর নাফ নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীরে বসে আছে সহায় সম্বলহীন কয়েক হাজার মানুষ।
পালিয়ে কেন উখিয়ায় চলে এলেন জানতে চাইলে মোক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখানকার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আগে থেকেই তাদের পরিচিত লোকজন ছিল।
“বাঁচার জন্যই পালিয়ে চলে আসছি। অনেকেই নাফ নদীর তীরে সীমান্ত পার হওয়ার অপক্ষোয় রয়েছে।”
দুই বছর আগেও পালিয়ে মংডু থেকে উখিয়ার কুতুপালংয়ে এসে ২০ দিনের মতো ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “মংডু থেকে আসতে কোনো সমস্যা হয় না, পথও চেনা আছে।”
কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ২৫ বছর আগে মংডু থেকে আসা মোক্তারের খালাশাশুড়ি জাহারা বেগমের কছেই এসে ওঠেন মোক্তার। জাহারাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
জাহারা বেগম জানান, ২৫ বছর আগে একবার সংঘর্ষের সময় স্বামীর সাথে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি।
বর্তমানে সাত সন্তানের জননী জাহারাই হাসপাতালে মোক্তারের সঙ্গে আছেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে তিনজন এপারে (বাংলাদেশ) আসে। তাদের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের শরণার্থী ক্যাম্পের পাশের হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরও অনেকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে এসেছেন বলে জানান তিনি।
মোক্তার ও মুছাকে নিয়ে তিনজন রোহিঙ্গা গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন।
গুলিবিদ্ধ অপরজনের নাম শামসুল ইসলাম (২৫)। মংডুর জিমাখালী এলাকার বাসিন্দা তিনি। তারও ডান কাঁধের ওপরের অংশে গুলি লেগেছে। তারই এক ভাগ্নে ক্যাম্পের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সূত্র: বিডিনিউজ
ওরা যাকে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে: আহত রোহিঙ্গা
Reviewed by সম্পাদক
on
August 26, 2017
Rating:
Reviewed by সম্পাদক
on
August 26, 2017
Rating:

No comments: