রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে আসছেন পোপ
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু পোপ ফ্রান্সিস। সফরকালে প্রথমে তিনি মিয়ানমার পরে বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সফরে তিনি প্রধানত মিয়ানমারের ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশ্বজনমত গঠনে কাজ করবেন।
ভ্যাটিকান সিটির বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বিশ্বের ১২০ কোটি ক্যাথলিক খ্রিস্টানের প্রধান ধর্মগুরু ২৭ থেকে ৩০ নভেম্বর মিয়ানমার এবং ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন।
পোপ ফ্রান্সিসের এই সফর হবে মিয়ানমারে প্রথম কোনো পোপের পদার্পণ। বাংলাদেশে অবশ্য ১৯৮৬ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল সফর করেছিলেন।
খ্রিস্টানদের প্রধান এই ধর্মগুরু বরাবরই রোহিঙ্গাদের ওপরে নির্যাতন নিয়ে সোচ্চার। ফ্রান্সিস এর আগেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন, মুসলমান ধর্মাবলম্বী এ জনগোষ্ঠী মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন।
আজ সোমবার পোপের সফর নিয়ে ভ্যাটিকান সিটির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও উঠে এসেছে এই কথাই। সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা ভাইদের ওপর অত্যাচার আর নীপিড়নের মন খারাপ করা প্রতিবেদন পড়ে পোপ ফ্রান্সিস ব্যথিত। তিনি অন্তরের অন্তস্তল থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নীপিড়ন অনুভব করতে পারছেন। এবং তাঁদের রক্ষায় পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করেছেন। এখন তিনি রোহিঙ্গা ভাইদের প্রতি একাত্মতা জ্ঞাপনে এবং তাঁদের অধিকার রক্ষার দাবিতে সরব হয়ে তাঁদের দেখতে যাচ্ছেন।
এর আগে গত শুক্র ও শনিবার মিয়ানমারের সিকিউরিটি ফোর্স রোহিঙ্গা ‘কথিত জঙ্গি’ দমনের নামে জনগোষ্ঠীর সাধারণ নাগরিকদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।
এদিকে, শেষ খবর অনুযায়ী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা অব্যাহত আছে। গত দুদিনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০৪ জনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সহিংসতার মুখে মংডু ও বুথিডং শহর থেকে বেসরকারি সংস্থার বেশ কিছু মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সহিংসতাপ্রবণ এলাকা থেকে প্রায় চার হাজার অমুসলিম নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সহিংসতার মুখে পালিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মাঝখানের নাফ নদীর সীমান্ত ধরে শূন্যরেখায় বসে আছেন। মিয়ানমারের দিক থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছেন রয়টার্সের একজন প্রতিনিধি। সেখানে থাকা ৬১ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ সেই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘দয়া করে আমাদের বাঁচান। আমরা এখানেই থাকতে চাই। না হলে তো আমাদের হত্যা করা হবে।’
মিয়ানমার থেকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা নারী-পুরুষরা অভিযোগ করেছে, কালো ও সেনাবাহিনীর পোশাক অস্ত্রধারীরা পুরুষদের নির্বিচারে হত্যা করছে, নারীদের ওপর চালাচ্ছে নির্যাতন। হত্যা, গুম, খুন আর ধর্ষণের মুখে রাখাইন রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন রোহিঙ্গারা।
জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। জাতিগতভাবে নির্মূল করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলো আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেছে।
সূত্র: শীর্ষনিউজ
রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে আসছেন পোপ
Reviewed by সম্পাদক
on
August 28, 2017
Rating:
No comments: